ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় সম্প্রসারিত হচ্ছে সওদাগর হাট, টোল ছাড়াই চলছে পশু বিকিকিনি

pekua,,নাজিম উদ্দিন, পেকুয়া :::

পেকুয়ায় সম্প্রসারিত হতে চলছে বারবাকিয়ার ঐতিহ্যবাহী সওদাগর হাট। সম্পুর্ন টোল আদায় ছাড়াই বিকিকিনি হচ্ছে পশু। উপজেলার প্রাচীনতম হাট-বাজারগুলোর মধ্যে বারবাকিয়া বাজার (সওদাগর হাট) অন্যতম বানিজ্যিক কেন্দ্র। মহাকুমা জেলায় সওদাগর হাট চট্টগ্রাম ও পরবর্তী কক্সবাজার জেলায় হাট-বাজারগুলোর মধ্যে প্রথম গড়ে উঠে। নৌ ও সড়ক পথে পন্য উঠা নামার অন্যতম স্থান হওয়ায় অনেক আগে থেকে সওদাগর হাট এর যাত্রা সুচিত হয়। উপকুলের অন্যতম প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে এ বাজারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সওদাগর হাটের গৌরব হারাতে বসেছিল। গত এক যুগ ধরে বাজারের পরিধি ও ব্যবসা বানিজ্যের ধ্বস নামে। জানা গেছে প্রায় দু’শ বছর আগে বারবাকিয়া সওদাগর হাটের যাত্রা শুরু হয়। এ অঞ্চলের প্রখ্যাত জমিদার ছৈয়দুর রহমান ওয়ারেচী এ বাজারে উদ্যেক্তা। তিনি তার নিজ জায়গায় এ বাজার প্রতিষ্টা করেন। সে সময় থেকে এ বাজারের নাম করন করা হয় সওদাগর হাট। বর্তমানে বারবাকিয়া বাজার নামে পরিচিত। ওই সময় থেকে সওদাগর হাট চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ব্যবসা বানিজ্যের অন্যতম বানিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে প্রসার লাভ করে। প্রতি সপ্তাহে দু’দিন হাট বসে। বৃহষ্পতিবার ও সোমবারে হাট-বাজারের দিনে বিকিকিনির জন্য দুর দুরান্ত থেকে সওদা করতে বণিকরা ছুটে আসতো এ বাজারে। উপজেলার পাহাড়ি ইউনিয়ন বারবাকিয়ায় এর অবস্থান হলেও এ বাজারের সাথে যাতায়তের অন্যতম মাধ্যম ছিল নৌ পথ। ভোলা খালের অববাহিকায় সওদাগর হাটের অবস্থান। ওই সুবাধে মালামাল পরিবহনের অন্যতম উপায় ছিল সাম্পান ও নৌ যোগাযোগ। এক সময় পেকুয়ার প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম ছিল মোবারেকা এভিনিউ সড়ক। চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ সারা দেশের সাথে সড়ক যোগযোগের অন্যতম মাধ্যম এ মোবারেকা এভিনিউ সড়ক। টইটং, রাজাখালী, বারবাকিয়া, মগনামা উজানটিয়া, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কুতুবদিয়ার লোকজন যাতায়ত করতেন এ সড়ক দিয়ে। এর অবস্থান বারবাকিয়া বাজারের উপর দিয়ে গিয়ে শেষ হয়েছে চকরিয়া হারবাংয়ের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে। ছৈয়দুর রহমান ওয়ারেচী জীবদ্দশা পর্যন্ত বাজারটির নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টা করেছিলেন। ১৯৬৭সালে তিনি মৃত্যু বরন করেন। এরপর তার ছেলে উপকুলের প্রচন্ড জনপ্রিয় নেতা উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি ছাদেকুর রহমান ওয়ারেচী এ বাজারের তদারকি ভার দেখ ভাল করতেন। অত্যন্ত সুশৃংখল ও সুচারুরুপে তারা এর পরিচালনা সুদুর প্রসারি করতেন। ছাদেকুর রহমান ওয়ারেচী ইন্তেকালের কয়েক বছর আগে থেকে বাজারটির ধ্বস নামে। এর মধ্যে প্রায় দু’বছর ধরে সওদাগর হাটে কোন ধরনের পশু বিকিকিনি হয়নি। পেকুয়ায় পশু বিকিকিনি এক চেটিয়া মার্কেট চলে যায় পেকুয়া বাজারে। এদিকে গত কোরবানিকে ঘিরে সওদাগর হাটে কেনা বেচা হয় প্রচুর পশু। বাজার পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্ত মতে নতুন করে উদ্যেগ নেয়া হয় এ বাজারে পশু বিকিকিনির জন্য। ছাদেকুর রহমান ওয়ারেচীর দু’ ছেলে শহিদুর রহমান ওয়ারেচী, ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচী বাজারটি সম্প্রসারনের উদ্যেগ গ্রহন করেছেন। পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে দাদা ও পিতার ওয়ারিশরা দৃঢ় সংকল্প বদ্ধ হয়েছেন। বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জাকের হোসেন ও ব্যবসায়ীদের সম্বলিত প্রচেষ্টায় ওয়ারেচী পরিবারের দু’কর্নদার বাজারের সম্প্রসারনের এ উদ্যেগ হাতে নিয়েছেন। গত সোমবার সপ্তাহিক হাটের দিন বারবাকিয়া বাজারে (সওদাগর হাট) নতুন করে পশু বিকিকিনি শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। বাজারের পশ্চিম পাশে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র মাঠে পশু বিকিকিনি জায়গা নির্ধারন করা হয়েছে। ওইদিন বিকেলে ছাদেকুর রহমান ওয়ারেচীর ছেলে ও শিলখালী ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচী এর শুভ উদ্বোধন করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জাকের হোসেন, ব্যবসায়ী মনছুর আলম, মো.মানিক, ওসমান, আব্দু রহমান, ডা.আজিজুর রহমান, মো.হারুনুর রশিদ, আকতার আহমদ, আব্দুল মোনাফ, মনির উদ্দিন, বাবু আশিষ কুমার নাথ, ডা.মিলন কান্তি নাথ, টিটু শীল, মংকাইন দফাদার প্রমুখ। বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জাকের হোসেন জানায় ওইদিন থেকে বারবাকিয়া বাজারে পশু বেচা কেনা শুরু হয়েছে। কোন ধরনের টোল (হাসিল) নেওয়া হচ্ছেনা। এদিন বাজারে ৬৭টি গরু ও ২৩টি ছাগল বিক্রি হয়েছে। শৃংখলা রক্ষা ও দেখা ভাল করতে স্বেচ্ছাসেবক রাখা হয়েছে। বাজার পরিচালনা কমিটি এ খাতে অর্থের যোগান দিচ্ছে। শহীদুর রহমান ওয়ারেচী জানায় বাপ দাদার স্মৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে বাজারটির প্রতি নজর দেয়া হয়েছে। কোন ধরনের টোল নেওয়া হবেনা। ব্যবসায়ীদের নিয়ে ইতি পুর্বে কয়েক দফা বৈঠক করেছি। তারা সর্বাত্বক সহযোগিতা করছে। আশা করছি সওদাগর হাট খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে হারানো গৌরব ফিরে পেতে সক্ষম হবে।

পাঠকের মতামত: